নিজেকে প্রমাণের স্বপ্নে মশগুল সাকারিয়া
নিজেকে প্রমাণের স্বপ্নে মশগুল সাকারিয়া, বাবা পঙ্গু, ভাইয়ের আত্মহত্যা, একাধিক প্রতিকূলতা জয় করে রাজস্থানের নায়ক ১ কোটি ২০ লক্ষ টাকায় রয়্যালস শিবিরে যোগ দিয়েছেন চেতন। তাঁর এই আইপিএল চুক্তি যেন নতুন সকাল এনে দিয়েছে তাদের পরিবারে।
সোমবার সন্ধের পর হয়তো আইপিএল সংক্রান্ত খবরের নিরিখে গুগল সার্চে সবচেয়ে বেশি খোঁজ হয়েছে চেতন সাকারিয়ার নাম। সোমবার সন্ধের আগে যে নামটার সঙ্গে সেই অর্থে পরিচিত ছিল না দেশের ক্রিকেট অনুরাগীরা, রাতারাতি সেই নামটা সেনসেশন হয়ে গেল কীভাবে। আসলে সৌরাষ্ট্রের ২৩ বছরের বাঁ-হাতি পেসারের উত্থানের গল্পটা অনেকটা পাহাড়ি রাস্তার জিগ জ্যাগের মতো। ১ কোটি ২০ লক্ষ টাকায় রয়্যালস শিবিরে যোগ দিয়েছেন চেতন। তাঁর এই আইপিএল চুক্তি যেন নতুন সকাল এনে দিয়েছে তাদের পরিবারে।
আরো পড়ুনঃ চমক দিলেন ঋষভ পন্ত, ধোনি ম্যাজিক ফিকে
এর ঠিক আগের জার্নিটা চোখে জল এনে দেবে অনুরাগীদের। আইপিএল নিলামের এক মাস আগে চেতন তখন ব্যস্ত রাজ্যের হয়ে সৈয়দ মুস্তাক আলি ট্রফি খেলতে। লরি ড্রাইভার চেতনের বাবা তিন-তিনবার দুর্ঘটনার পর শয্যাশায়ী। এমন সময় পরিবারের একমাত্র রোজগেরে মানুষ অর্থাৎ চেতনের ছোট ভাই আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়। কিন্তু চেতনের খেলায় মনোনিবেশে বিঘ্ন ঘটবে বলে সেই ঘটনা চেতনের থেকে বেমালুম লুকিয়ে যান তাঁর মা। ফোন করে চেতন ভাইয়ের খোঁজ নিলেই কথা ঘুরিয়ে দিতেন মা। বাবার সঙ্গেও চেতনকে কথা বলতে দিতেন না মা, কারণ তিনি জানতেন বাবা সমস্তকিছু জানিয়ে দেবে চেতনকে।
তবে কয়েকদিন বাদে নিজেই ধৈর্য্য হারিয়ে সবকিছু চেতনকে বলে দেন তাঁর মা। সমস্ত ঘটনা শোনার পর ভাই হারানোর শোকে এক সপ্তাহ কারও সঙ্গে কথা বলেননি চেতন। কোনও খাবারও দাঁতে কাটেননি। ঘটনার এক মাস পর রাজস্থান রয়্যালস যখন তাঁকে কোটি টাকারও বেশি মূল্যে স্কোয়াডে নিল, তখন মনে হল যেন স্বপ্ন দেখছি। জানিয়েছেন চেতনের মা। বাবা কার্যত অথর্ব হয়ে যাওয়ার পর রোজগারের তাগিদে একসময় মামার মুদিখানা দোকানেও বসতে হয়েছে সাকারিয়াকে। চেতনের মা-ও অর্থের তাগিদে এমব্রয়ডারির কাজ করতেন। তবে জীবনের কালো অধ্যায়গুলোকে পিছনে ফেলে সাকারিয়ার সামনে এখন উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ।
ঘরোয়া ক্রিকেটের পর আইপিএলের প্রথম ম্যাচে সাড়া ফেলেছন সৌরাষ্ট্র ক্রিকেটার। সাম্প্রতিক সময়ে জাতীয় দলের স্টেপিং স্টোন হিসেবে ঘরোয়া ক্রিকেটের চেয়েও কিয়দংশে এগিয়ে বোধহয় আইপিএল। তাই নটরাজন কিংবা ওয়াশিংটন সুন্দরদের মতো আইপিএলে বাজিমাত করেই জাতীয় দলের দরজা খুলে যাক সাকারিয়ার সামনে প্রত্যাশা তেমনই। তবে এখনও লম্বা পথ চলা বাকি ২৩ বছরের বাচ্চা ছেলেটির। সাকারিয়ার মায়ের কাছে ছেলের আইপিএলে ডাক পাওয়া তাদের পরিবারের যন্ত্রণায় প্রলেপের মত।
সোমবার দল হারলেও ৩১ রানে ৩ উইকেট এবং শর্ট ফাইন লেগে শরীর শূন্যে ছুঁড়ে পুরানকে তালুবন্দি করে তাক লাগিয়েছেন সাকারিয়া। ময়াঙ্ক আগরওয়াল, কেএল রাহুল এবং ঝাই রিচার্ডসন প্রথম ম্যাচে সাকারিয়ার শিকার। রয়্যালস বোলারের জীবনের ট্র্যাজেডি সোশ্যাল মিডিয়ায় অনুরাগীদের জন্য শেয়ার করেছেন বীরেন্দ্র সেহওয়াগ। বীরু লিখেছেন, ‘কয়েকজন তরুণ ক্রিকেটার এবং তাদের পরিবারের কাছে এটাই হল ক্রিকেটের অর্থ। আইপিএল হল ভারতীয় ক্রিকেটারদের স্বপ্ন দেখার একটা সত্যিকারের পরিমাপ এবং কিছু অসাধারণ চারিত্রিক দৃঢ়তার গল্প।’