বিশ্বকাপ থেকে বিদায়ের পর পাকিস্তান দল এরই মধ্যে বাংলাদেশে সিরিজ খেলতে চলে এসেছে। তবে গত পরশু টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে অস্ট্রেলিয়ার কাছে হারটা পাকিস্তানকে অনেক দিন পোড়াবে নিশ্চিত। বাবর আজমরা কোথায় ভুল করলেন, কোন দিকটাতে আরও ভালো করা যেত, কোন বিষয়টি ভবিষ্যতে মাথায় রাখতে হবে…এসব নিয়ে আলোচনাও হবে। হচ্ছেও।
ভারতের সাবেক পেসার জহির খান যেমন অস্ট্রেলিয়া-পাকিস্তান ম্যাচে পাকিস্তানের একটা ভুল বের করেছেন। আর ভুলটা পাকিস্তানের অধিনায়ক বাবর আজমের অধিনায়কত্বে। জহিরের চোখে, দুবাইয়ের সেমিফাইনালে বাবরের অধিনায়কত্ব একটু অন্যরকম হলেই আগামীকালের ফাইনালে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে অস্ট্রেলিয়া নয়, পাকিস্তানই খেলত।
দুবাইয়ে পরশু মোহাম্মদ রিজওয়ানের পর ফখর জামানের দারুণ অর্ধশতকে অস্ট্রেলিয়াকে ১৭৭ রানের লক্ষ্য দেয় পাকিস্তান। তাড়া করতে নেমে একপর্যায়ে ৯৬ রানেই প্রথম পাঁচ ব্যাটসম্যানকে হারায় অস্ট্রেলিয়া। কিন্তু এরপর মার্কাস স্টয়নিস ও ম্যাথু ওয়েডের ব্যাটে ঘুরে দাঁড়ানো অস্ট্রেলিয়া শেষ পর্যন্ত ম্যাচটা ৬ বল হাতে রেখেই জেতে ৫ উইকেটে। শাহিন আফ্রিদির করা ১৯তম ওভারের তৃতীয় বলে হারিসের হাত থেকে ওয়েডের ক্যাচ পড়ে যায়, এরপর টানা তিন বলে তিন ছক্কা মেরে অস্ট্রেলিয়াকে জিতিয়ে দেন ওয়েড।
কিন্তু হারের পেছনে হারিস কিংবা শাহিন নন, বাবরেরই অধিনায়কত্বের ভুল বেশি চোখে পড়ছে জহির খানের। ভারতের জার্সিতে ১৯টি আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি খেলা জহিরের চোখে বোলারদের ঘুরিয়ে–ফিরিয়ে খেলানোর ক্ষেত্রে হিসাবে ভুল করেছেন বাবর।
‘আমার মনে হয়েছে, বাবরের উচিত ছিল শাহিন শাহ আফ্রিদিকে ১৭ ও ১৯তম ওভারে বোলিংয়ে আনা। ওই জায়গাতেই ভুল হয়ে গেছে, বোলার হিসেব করে ওভার বাঁচিয়ে রাখা, সেগুলো কীভাবে কাজে লাগাবে, সেটি ঠিক করা,’ ভারতের ক্রিকেটবিষয়ক ওয়েবসাইট ক্রিকবাজের ইউটিউব চ্যানেলে বলেছেন জহির।
সেমিফাইনালে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ম্যাচে অস্ট্রেলিয়ার ইনিংসের ১৩তম ওভার শেষেও বাবরের হাতে মূল তিন পেসারের মধ্যে শাহিন আফ্রিদি ও হাসান আলীর দুটি করে ওভার বাকি ছিল আর হারিস রউফের ওভার বাকি ছিল তিনটি। ১৩ ওভার শেষে অস্ট্রেলিয়ার রান ছিল ৫ উইকেটে ১০৩, তখনো ৪২ বলে ৭৪ রান দরকার তাদের।
এরপর ১৯তম ওভারে শাহিনকে আনার আগপর্যন্ত বাবর যেভাবে বোলারদের কাজে লাগিয়েছেন, তা হলো ১৪তম ওভারে হারিস রউফ (দিয়েছেন ৬ রান), ১৫তম ওভারে শাহিন (৬ রান), ১৬তম ওভারে হাসান আলী (১২ রান), ১৭তম ওভারে হারিস (১৩ রান) ও ১৮তম ওভারে হাসান (১৫ রান)।
১৯তম ওভারে শাহিন যখন বোলিংয়ে আসছেন, তিনি জানতেন, তাঁকে যা করার ওই ছয় বলেই করতে হবে। তিনি ওই ছয় বলে কিছু না করতে পারলে শেষ ওভারে বোলারের ওপর চাপ পড়ে যাবে। শেষ ওভারে বল করার মতো বোলার বলতে তখন বাবরের হাতে ছিলেন বাঁহাতি স্পিনার ইমাদ ওয়াসিম (৩ ওভারে দিয়েছেন ২৫ রান), হারিস রউফ (৩ ওভারে ৩২ রান) অথবা মোহাম্মদ হাফিজ (১ ওভারে ১৩ রান)। কিছু করে দেখানোর চাপ বেশি ছিল বলেই হয়তো, চাপে ভেঙে পড়েন শাহিন। তার ওপর তৃতীয় বলে ওয়েডের ক্যাচ হাতছাড়া হওয়াও তাঁকে ভুগিয়েছে।
জহির খানের বিশ্লেষণ বলছে, শাহিনের তৃতীয় ওভারটা আগেভাগেই করিয়ে ফেলেছেন বাবর, ‘(১৩ ওভারের পর) বাবর শুরু করল রউফকে দিয়ে, এরপর শাহিনকে একটু আগেভাগেই নিয়ে আসে। ও যদি সেটা একটু পরে করত, মাঝে হাসানকে দিয়ে বোলিং করিয়ে নিত, তাহলে ম্যাচটার গতিপথ হয়তো বদলে যেত। কারণ, তখন ওর হাতে ম্যাচের শেষ দিকে ওর মূল বোলারের (শাহিন) ১২টি বল বাকি থাকত।’
ক্রিকবাজের বিশ্লেষণ অনুষ্ঠানে জহিরের সঙ্গে ছিলেন অজয় জাদেজাও। সাবেক ভারতীয় অলরাউন্ডার জাদেজা বলছিলেন, বাবরের আগেভাগে (১৫তম ওভারে) শাহিনকে আনার উদ্দেশ্য ছিল একটা উইকেট নেওয়া। কারণ, ওয়েড ও স্টয়নিস ছিলেন অস্ট্রেলিয়ার শেষ দুই স্বীকৃত ব্যাটসম্যান।
কিন্তু জহির সে যুক্তির পাল্টা দিলেন এভাবে, ‘পাঁচ উইকেট পড়ে গিয়েছিল, তার মানে আপনি জানতেন, এই দুজন শেষ পর্যন্ত ব্যাট করাই অস্ট্রেলিয়ার জয়ের সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি রাখার একমাত্র উপায়। তার মানে ওরা কোনোভাবে পাল্টা আঘাত করতে চাইলে সেটা ইনিংসের শেষের দিকেই করবে। যেটা ওয়েড করেছে।’
যুক্তির সমর্থনে জহির খান যোগ করেন, ‘এ রকম পরিস্থিতিই (শেষ দিকে ওয়েড-স্টয়নিসের আগ্রাসন) হতে পারত, আর এ রকম মুহূর্তে আপনার সেরা বোলার কিছু রান দিলেও আপনার তাতে কিছু মনে করা উচিত নয়। শাহিন রান দিয়েছে, তাতে কী!’
হয়তো ঠিক। হয়তো নিজের আরও দুটি ওভার বাকি থাকলে, তিনি ১৯তম ওভারে কিছু করতে না পারলে শেষ ওভারে কী হবে—সে ভাবনার বাড়তি চাপ না থাকলে শাহিন আফ্রিদির বোলিং আরও বুদ্ধিদীপ্ত হতেই পারত। কিন্তু এসব বিশ্লেষণে হয়তো পাকিস্তানের এখন আর আগ্রহ নেই। যা হওয়ার তা তো হয়েই গেছে! আর যা হয়েছে, তা পাকিস্তানের জন্য বেদনার। কেই–বা হৃদয় খুঁড়ে বেদনা জাগাতে চায়!