রান আউটে শুরু, রান আউটে শেষ। ম্যাচের প্রথম ইনিংসের প্রথম ওভারেই রান আউট হয়েছিলেন লোকেশ রাহুল। দ্বিতীয় ইনিংসটা শেষ হলো রান আউটেই। তাতে দলীয় হ্যাটট্রিকও হয়েছে লক্ষ্ণৌ সুপার জায়ান্টসের। অবশ্য এর চেয়ে বড় তৃপ্তি নিয়ে মাঠ ছেড়েছে দলটি।
প্রথমে ব্যাট করতে নেমে ১৭৫ রান করা লক্ষ্ণৌ কলকাতাকে ১০১ রানে গুটিয়ে দিয়েছে। ৭৫ রানের এই জয়ে পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষে চলে গেছে লক্ষ্ণৌ। কাগজে-কলমে না হলেও এবার প্লে-অফটাও প্রায় নিশ্চিত হয়ে গেল দলটির। ওদিকে ১১ ম্যাচে সপ্তম হারে আট পয়েন্ট নিয়ে আটেই থাকল কলকাতা নাইট রাইডার্স।
ডি কক রাহুলের অভাব বুঝতে দেননি অথচ ম্যাচটা খুব ভয়ংকরভাবে শুরু হয়েছিল লক্ষ্ণৌর। এর চেয়ে বাজে শুরু হয় না। আইপিএলের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান লোকেশ রাহুলের। লক্ষ্ণৌ সুপার জায়ান্টস অধিনায়ক এবার প্রথম ১০ ম্যাচে ২ শতক ও ২ অর্ধশতকে ৪৫১ রান করেছেন। সেটাও ৫০ গড়ে।
আজ তিনি শূন্য রানে আউট। তবু তাঁর স্ট্রাইকরেটে কোনো পরিবর্তন নেই। কীভাবে হবে? আজ যে লোকেশ রাহুল রান আউট হয়েছেন কোনো বল না খেলে!
এত বড় ধাক্কা সামলেও উড়ছিল লক্ষ্ণৌ। কুইন্টন ডি কক যে কাউকেই পাত্তা দিচ্ছিলেন না, অন্য প্রান্তে দীপক হুদাকে দর্শক বানিয়ে কলকাতার বোলারদের কচুকাটা করছিলেন। ষষ্ঠ ওভারের শুরুতেই পঞ্চাশ পেরিয়েছে লক্ষ্ণৌ। পাওয়ার প্লেতে এসেছে ৬৬ রান। সপ্তম ওভারেই ২৭ বলে পঞ্চাশ পূর্ণ ডি ককের। কিন্তু সুনীল নারাইন রান উৎসবে বাগড়া দিলেন। ডি ককের রান আর বাড়ল না। ২৭ বলে ৫০ রানেই ফিরলেন দক্ষিণ আফ্রিকান ওপেনার।
দীপক হুদা এরপর আক্রমণের দায়িত্ব বুঝে নিয়েছেন। আগেই ১৫ বলে ২৩ রান করা হুদা ক্রুনাল পান্ডিয়াকে নিয়ে ৩৪ রান এনে দিয়েছেন। এর মধ্যে ১২ বলে ১৮ রান হুদার। কিন্তু পান্ডিয়া অস্বাভাবিক ধীরগতিতে ২০ বলে ১৫ রান করেছেন এ সময়।
দলকে ১০৭ রানে রেখে হুদা ফিরেছেন ১৩তম ওভারে। ক্রুনাল ও আয়ুশ বাদোনির জুটি ১৩ বলে ১৫ রান তুলে থেমেছে। ২৭ বলে ২৫ রান করা পান্ডিয়ার বিদায়ের পরও রানের গতি বাড়ছিল না। ১৮ ওভার শেষে লক্ষ্ণৌর রান ছিল ১৪২।
১৯তম ওভারে শিবম মাভিকে পেয়ে হাত খুললেন স্টয়নিস ও হোল্ডার। ১৯তম ওভারের সবই ছিল। ওভারের প্রথম চারটি বলই মারার মতো ছিল। প্রথম তিনটি লেগ সাইডের বিভিন্ন দিকে আছড়ে মারলেন মার্কাস স্টয়নিস। চতুর্থ বলটিও মারার মতো ছিল। কিন্তু ঠিকমতো মারতে পারেননি, মিড উইকেট সীমানায় শ্রেয়াস আইয়ারের হাতে ধরা পড়লেন।
মাভির বিপদ কমেনি তাতে। নামলেন জেসন হোল্ডার। পরের বলটা স্কয়ার বাউন্ডারি দিয়ে আবার ছক্কা। ষষ্ঠ বল উড়ল লং অফ দিয়ে। ৩০ রান আর এক উইকেটের ওভার!
কিন্তু শেষ ওভারটি মনমতো হয়নি লক্ষ্ণৌর। ২ উইকেট হারিয়ে মাত্র ৪ রান তোলায় লক্ষ্ণৌ থেমেছে ১৭৬ রানে। রাসেলের ৪৫ রান কোনো কাজে আসেনি কলকাতার
এ উইকেটে এ রানটাই জয়ের জন্য যথেষ্ট। যদি বল লাইন লেংথ মেনে করা যায়। মহসিন খান, দুষ্মন্ত চামিরা ও জেসন হোল্ডার পাওয়ার প্লেতে সেটা করেই কাবু করে দিয়েছেন কলকাতাকে। ২৩ রান তুলতেই বাবা ইন্দ্রজিৎ (০), শ্রেয়াস আইয়ার (৬), অ্যারন ফিঞ্চ (১৪) আউট। বাঁহাতি পেসার মহসিন প্রথম দুই ওভারে মাত্র ১ রান দিয়ে পেতেছেন ১ উইকেট।
সপ্তম ওভারে আভেশ খানও পেয়ে গেলেন উইকেট। ১১ বলের যন্ত্রণাদায়ক ইনিংসে ২ রান সঙ্গী করে ফিরেছেন নিতীশ রানা। এর পর একটু থিতু হয়েছে কলকাতা ইনিংস। পঞ্চম উইকেট জুটিতে ৪৪ রান এনে দিয়েছেন রিংকু সিং ও আন্দ্রে রাসেল। তাতে রিংকুর অবদান ৫। ১৭ বলে ৩৯ রান করে অন্য প্রান্তে রাসেল। সুনীল নারাইন নেমেই ছক্কা মারলেন। কিন্তু ১৯ বলে ৩ চার ও ৫ ছক্কার রাসেলের ইনিংস থামল ৪৫ রানে।
১৫তম ওভারে হোল্ডারের টানা দুই বলে সুনীল নারাইন (২২) ও টিম সাউদি (০) আউট হয়ে হ্যাটট্রিকের সম্ভাবনা জাগিয়েছিলেন। হারশিত রানা সেটা ঠেকালেও সেই বলেই রানআউট হয়েছেন তিন রান নিতে গিয়ে! ৩১ রানে ৩ উইকেট হোল্ডারের, ১৯ রানে ৩ উইকেট পেয়েছেন আভেশ খান।