পাকিস্তানের সর্বকালের সবচেয়ে গতিশীল বোলার শোয়েব আখতারের জন্ম রাওয়ালপিন্ডিতে। শুধু এ কারণেই নয়, এমনিতেও রাওয়ালপিন্ডির উইকেট পেসবান্ধব বলে একটা সুনাম আছে। কিন্তু অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সিরিজের প্রথম টেস্টে সেই রাওয়ালপিন্ডির উইকেটই কিনা পেসারদের উপহার দিয়েছে শুধুই হতাশা! পাকিস্তানের সাবেক অধিনায়ক ও পেস বোলিং অলরাউন্ডার ইমরান খান কি তা দেখেছেন? কী করে দেখবেন, এখন যে তিনি খেলা দেখার সময়ই পান না!
খেলোয়াড়ি জীবনে তাঁর সময়ের সেরা অলরাউন্ডারদের মধ্যে একজন ছিলেন ইমরান। তাঁর নেতৃত্বেই পাকিস্তান জিতেছিল ১৯৯২ বিশ্বকাপের শিরোপা। ক্রিকেটকে বিদায় জানানোর পর সেই ইমরান বেছে নেন রাজনীতির মাঠ। সেখানেও সফলতার চূড়ায় উঠেছেন তিনি। ইমরান খান এখন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী। এ পদই তাঁকে ক্রিকেট থেকে অনেক দূরে সরিয়ে দিয়েছে। দেশ চালানোর মহাব্যস্ততার কারণে ক্রিকেট খেলা দেখার সময়ই পান না তিনি।
পাকিস্তান–অস্ট্রেলিয়া সিরিজে পেসারদের সময় পাকিস্তানের শাহিন আফ্রিদির মতো এমন হতাশায়ই কাটছেছবি: এএফপি
সম্প্রতি অস্ট্রেলিয়ার সিডনি মর্নিং হেরাল্ডের জন্য কিংবদন্তি ক্রিকেটার গ্রেগ চ্যাপেল একটি সাক্ষাৎকার নিয়েছেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর। সেখানেই চ্যাপেল ইমরানকে প্রশ্ন করেছিলেন, অস্ট্রেলিয়া–পাকিস্তান সিরিজের খেলা দেখছেন কি না। সে প্রশ্নের উত্তরে ইমরান বলেছেন, ‘দুর্ভাগ্যের বিষয় হচ্ছে, আমার ক্রিকেট খেলা দেখার দিন শেষ! আমি আসলে খেলা দেখার সময়ই পাই না।’
খেলা না দেখলেও ক্রিকেটের খোঁজখবর ঠিকই রাখেন ইমরান। খোঁজ তিনি রাখেন প্রতিদিনের পত্রিকা পড়ে। সেখান থেকেই জানতে পেরেছেন, রাওয়ালপিন্ডির উইকেট খুব একটা ভালো ছিল না। এ বিষয়ে কথাও বলেছেন ইমরান, ‘খেলা না দেখতে পারলেও পত্রিকার মাধ্যমে খবরটা জানি। কিন্তু উইকেট ভালো না হলে আমরা টেস্ট ম্যাচে ফল পাব না।’
ক্রিকেটের সংক্ষিপ্ততর সংস্করণ টি–টোয়েন্টি নিয়েও কথা বলেছেন ইমরান। টেস্ট ক্রিকেট আর টি–টোয়েন্টির পার্থক্য বোঝাতে গিয়ে তিনি বলেছেন, ‘ব্যাটসম্যানদের উদ্ভাবনী সব শট আর দুর্দান্ত ফিল্ডিং নিয়ে টি–টোয়েন্টি খুব বিনোদনদায়ী একটি সংস্করণ। তবে ক্রিকেটের সত্যিকার স্বাদ টেস্ট ক্রিকেটেই।’
২৪ বছর পর আবার অস্ট্রেলিয়া দল পাকিস্তান সফর করতে গিয়েছে। এটা নিয়েও চ্যাপেলের সঙ্গে কথা হয়েছে ইমরানের, ‘অস্ট্রেলিয়া দলকে সরকারপ্রধান পর্যায়ের নিরাপত্তা দেওয়া হচ্ছে। আমাদের দেশের মানুষ অস্ট্রেলিয়া দলের আসার জন্য অপেক্ষা করে ছিল। মরা পিচ ছাড়া আর কিছুই মানুষের এই রোমাঞ্চে জল ঢালতে পারছে না।’
ক্রিকেটার থেকে রাজনীতিক হয়েছেন ইমরান, দুটিরই চূড়া ছুঁয়েছেন। এমন একজনের সাক্ষাৎকার নিতে গিয়ে খেলার পাশাপাশি রাজনীতি নিয়ে প্রশ্ন না করলে কি হয়! চ্যাপেল রাজনীতি নিয়েও প্রশ্ন করলেন ইমরানকে। সেই প্রশ্নেও অবশ্য মিশে থাকল রাজনীতি। খেলোয়াড়ি জীবনের শিক্ষা রাজনীতিক জীবনে কাজে লেগেছে কি না, প্রশ্নের উত্তরে ইমরান বলেছেন, ‘হ্যাঁ, চাপ সামলানোর সামর্থ্য; দলের প্রতিটি বিপদে পড়া থেকে শিক্ষা কাজে লেগেছে, শেষ বল পর্যন্ত খেলে লড়াই চালিয়ে যাওয়ার বিষয় থেকে শিক্ষা পেয়েছি।’
বিশ্বরাজনীতিতে ব্যস্ত সময় কাটছে ইমরানের। সম্প্রতি রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে বৈঠক করেছেন, এদিকে আবার রাশিয়া–ইউক্রেন যুদ্ধ চলছে, সব মিলিয়ে ইমরান বিশ্ববাসীর জন্য কী বার্তা দিতে চান—চ্যাপেলের এমন একটি প্রশ্নে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর উত্তর, ‘সামরিক শক্তি প্রয়োগ করে সমস্যার সমাধানে বিশ্বাসী নই আমি। আমি আলোচনা আর কূটনীতিতে বিশ্বাসী।’
ক্রিকেট আর রাজনীতির মিশেলে আরও একটি প্রশ্ন ছিল। ক্যারিয়ারে অনেকবারই ওয়েস্ট ইন্ডিজের কঠিন পেস বোলিং আক্রমণ সামলাতে হয়েছে ইমরানকে। এখন এসে কোনটি তাঁর কাছে সহজ মনে হচ্ছে—সত্তর ও আশির দশকের বিখ্যাত সেই ক্যারিবিয়ান পেস আক্রমণ, নাকি কূটনৈতিক বাউন্সার? ইমরান নিজেই এবার কূটনৈতিক উত্তর দিলেন, ‘ওয়েস্ট ইন্ডিজের পেস আক্রমণ ও আন্তর্জাতিক ক্রিকেট আপনাকে মানসিক শক্তি দেবে। যত চাপে পড়বেন, মানসিক দিক থেকে তত বেশি শক্তিশালী হবেন আপনি।’
ইমরানকে শেষ প্রশ্নটা চ্যাপেল করেছেন অধিনায়ক হিসেবে। তিনি ছিলেন একজন ফাস্ট বোলার। ক্রিকেটে একটি কথা প্রচলিত আছে, ফাস্ট বোলাররা কখনোই ভালো অধিনায়ক হতে পারেন না। তবে ইমরান এটাকে মিথ্যা প্রমাণ করেছেন। ফাস্ট বোলার অধিনায়ক প্যাট কামিন্স সবচেয়ে বড় কী চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে পারেন? নিজের অভিজ্ঞতা থেকে ইমরান বলেছেন, ‘তাত্ত্বিক দিক থেকে বললে ফাস্ট বোলাররাই ভালো অধিনায়ক তৈরি করে। একজন ভালো অধিনায়ককে অবশ্যই এটা বোঝার সামর্থ্য থাকতে হবে যে কখন নির্দিষ্ট কোনো বোলারকে দিয়ে বোলিং করতে হবে, কখন বোলার পরিবর্তন করতে হবে এবং সেই অনুযায়ী ফিল্ডিং সাজানোর সামর্থ্যও থাকতে হবে। আর এগুলো করার ক্ষেত্রে ফাস্ট বোলাররা এগিয়ে থাকে।