ঘরের মাঠে আরেকটি সিরিজ শেষ করল বাংলাদেশ। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের আগে নিউজিল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে খেলা গত দুই সিরিজের উল্টো ফল নিয়ে পাকিস্তান সিরিজ শেষ করল বাংলাদেশ। অস্ট্রেলিয়াকে ৪-১ ব্যবধানে হারিয়ে নিউজিল্যান্ডকেও ৩-২ ব্যবধানে হারিয়েছিল বাংলাদেশ। তবে পাকিস্তানের বিপক্ষে ঘরের মাঠে তিন ম্যাচের সিরিজে ধবলধোলাই হয়েছে বাংলাদেশ।
সিরিজের ফলে ভিন্নতা থাকলেও একটি ব্যাপারে অবশ্য মিল ঠিকই আছে। আগের দুটি সিরিজের মতো পাকিস্তান সিরিজেও মিরপুরের উইকেট ব্যাটসম্যানদের সঙ্গে বিমাতাসুলভ আচরণ করেছে। দুই দলের ব্যাটসম্যানই রান করতে অনেক কাঠখড় পুড়িয়েছেন। মিরপুরের এমন উইকেট দেখে শহীদ আফ্রিদি তাই আজ প্রশ্ন তুলেছেন, এমন উইকেটে আর কত খেলবে বাংলাদেশ?
অস্ট্রেলিয়া সিরিজে মিরপুরের উইকেট মাইনফিল্ড হয়ে উঠেছিল। নিউজিল্যান্ড সিরিজেও সে উইকেটের চরিত্র বদলায়নি। দুটি টানা সিরিজ জিতে র্যাঙ্কিংয়ে বেশ ওপরে উঠে গিয়েছিল বাংলাদেশ। আর সে সুবাদেই আগামী টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সুপার টুয়েলভের জায়গা পাকা করে নিয়েছে বাংলাদেশ। নিজেদের উইকেটের সদ্ব্যবহার করে সিরিজ জেতার আত্মবিশ্বাস অবশ্য বিশ্বকাপে ঠুনকো বলে প্রমাণিত হয়েছে। স্কটল্যান্ডের কাছে হেরেছে বাংলাদেশ। বিশ্বকাপে টেস্ট খেলুড়ে সব দলের সঙ্গেই হেরেছে বাংলাদেশ।
বিশ্বকাপ থেকে শিক্ষা নিয়ে রাতারাতি ব্যাটিং–সহায়ক উইকেট বানিয়ে ফেলবে বাংলাদেশ—এমনটা আশা করা বাড়াবাড়ি। পাকিস্তানের বিপক্ষে সিরিজেও তাই মিরপুরের উইকেটে ব্যাটসম্যানদের ভুগতে হয়েছে। প্রথম দুই ম্যাচে বাংলাদেশের অধিনায়ক উইকেট ব্যাটিংয়ের জন্য ভালো ছিল বললেও বাবর আজম বলেছেন, উইকেটে শট খেলা কঠিন ছিল।
Bangladesh really need to do some soul searching, do they want to win on such pitches and give ordinary performances abroad and in World Cups? They have great talent and passion for the game but desperately need better pitches if they want to progress. https://t.co/RFJymfZkiE
— Shahid Afridi (@SAfridiOfficial) November 22, 2021
প্রথম ম্যাচে ১২৭ তাড়া করতে নেমে পাকিস্তানকে শেষ ওভার পর্যন্ত খেলতে হয়েছিল। আর আজ শেষ ম্যাচে তো ১২৪ তাড়াকরতে নেমে শেষ বল পর্যন্ত অনিশ্চয়তায় ছিল সফরকারীরা। এমন টান টান উত্তেজনা সৃষ্টি করার পেছনে উইকেটই মূল ভূমিকা রেখেছে। মিরপুরের উইকেটে শুরু থেকেই শট খেলা বেশ কঠিন বলে সবাই থিতু হতে সময় নিয়েছেন।
ম্যাচ শেষে শহীদ আফ্রিদি এ সিরিজ নিয়ে তাঁর চিন্তা জানাতে দুটি টুইট করেছেন। প্রথম টুইটে সিরিজ জেতায় পাকিস্তান দলকে অভিনন্দন জানিয়েছেন সাবেক অধিনায়ক, ‘অভিনন্দন পাকিস্তান!! শেষ দিকে অবশ্য একটু বেশিই কাছাকাছি চলে গিয়েছিল। দলকে টানা জিততে দেখে ভালো লাগছে। জয়ের ছন্দ ধরে রাখা একটা দলের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।’
দ্বিতীয় টুইটেই বাংলাদেশকে খোঁচা দিয়েছেন আফ্রিদি। ঘরের মাঠের উইকেট ব্যবহার করে এভাবে সিরিজ জেতার চেষ্টা করতে আখেরে দলের ভবিষ্যৎ যে নষ্ট করা হচ্ছে, সেটা মনে করিয়ে দিয়েছেন আফ্রিদি, বাংলাদেশের এবার একটু গভীরভাবে ভাবা উচিত। তারা কি এমন উইকেট ব্যবহার করে জয় পেয়ে আর প্রতিপক্ষের মাঠে আর বিশ্বকাপে গড়পড়তা পারফরম্যান্স করেই সন্তুষ্ট থাকতে চায়? ওদের অনেক প্রতিভা আছে এবং খেলাটার প্রতি আবেগ আছে। কিন্তু খেলায় উন্নতি করতে চাইলে খুব দ্রুত ওদের ভালো উইকেট বানানো দরকার।
বিশ্বকাপ চলাকালেই ক্রিকেট পরিসংখ্যান জ্যারড কিম্বার জানিয়েছিলেন, বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরাই বিশ্বে সবচেয়ে ধীরগতিতে রান করেন। এর পেছনে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের দুর্বলতার সঙ্গে উইকেটের অবদানও দেখেছিলেন কিম্বার। তিনি দেখিয়েছেন, টেস্ট খেলুড়ে দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের উইকেটেই সবচেয়ে ধীরগতিতে রান ওঠে। আর ওদিকে পাকিস্তানে ওভারপ্রতি সবচেয়ে বেশি রান হয়।
আজ মাহমুদউল্লাহ বলেছেন, অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ড সিরিজের চেয়ে এই সিরিজের উইকেট ভালো ছিল। পরিসংখ্যানও তাই বলছে। কিন্তু সেটা কতটুকু ভালো, সেটা নিয়ে আলোচনা হতেই পারে। বাংলাদেশ-পাকিস্তান সিরিজে ওভারপ্রতি ৬.১৮ রান উঠেছে। বাংলাদেশ ওভারপ্রতি ৫.৯৮ রান তুলেছে আর পাকিস্তান তুলেছে ৬.৪০ করে। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের সঙ্গে এই রানরেটকে মেলানো যায় না বলেই হয়তো আফ্রিদি আজ প্রশ্নটা রেখেই ফেললেন।