পরিবার নিয়ে একটু আয়োজন করে ঈদ উদ্যাপন করেছিলেন শহীদ আফ্রিদি। কন্যাদের নিয়ে হাজির হয়েছিলেন এক টিভিতে। তাঁরা কীভাবে ঈদ উদ্যাপন করেন, এ নিয়ে কথা বলেছেন সামা টিভির এক অনুষ্ঠানে। একটু পর পাকিস্তানের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফের সঙ্গে তোলা সাম্প্রতিক এক ছবি ও ইমরান খানের সঙ্গেও তোলা আরেক ছবির ব্যাপারে কথা বলেছেন আফ্রিদি।
কাশ্মীর নিয়ে সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের অবস্থানের বড় সমর্থক ছিলেন আফ্রিদি। এ নিয়ে কাশ্মীরে একটি র্যালিতেও অংশ নিয়েছিলেন। সে সময় এ নিয়ে বক্তৃতাও দিয়েছিলেন। কিন্তু ইমরান খান সরকারের পতনের পর আবার নতুন প্রধানমন্ত্রীকেও অভিনন্দন জানিয়েছেন পাকিস্তানের সাবেক অধিনায়ক। বলেছেন, ইমরান ভুল করেছেন বলেই আল্লাহ তাঁকে দেওয়া উপহার (প্রধানমন্ত্রীর পদ) কেড়ে নিয়েছেন।
এ কারণে আফ্রিদির কড়া সমালোচনা হচ্ছে। আফ্রিদিও চুপ থাকেননি, এক ভিডিও বার্তায় নিজের অবস্থান ব্যাখ্যা করেছেন। এ কারণে ক্ষমা চাওয়ার প্রয়োজন দেখছেন না আফ্রিদি।
পাকিস্তানের সাবেক অধিনায়ক শহীদ আফ্রিদি গত ১১ এপ্রিল টুইট বার্তায় আফ্রিদি নতুন প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে লিখেছিলেন, ‘পাকিস্তানের ২৩তম প্রধানমন্ত্রী হওয়ায় শাহবাজ শরিফকে অভিনন্দন। আশা করি পাকিস্তানকে বর্তমান আর্থিক ও রাজনৈতিক সমস্যা উত্তরণে ব্যবস্থাপনা দক্ষতা ব্যবহার করতে পারবেন তিনি।’
অনুষ্ঠানে নতুন প্রধানমন্ত্রীকে অভিনন্দন জানানোর প্রসঙ্গে আফ্রিদি বলেছেন, ‘আমি শুরু থেকেই শাহবাজ শরিফকে পছন্দ করি। পাকিস্তানে তাঁর মতো প্রশাসক দেখান দেখি, পারবেন না। কারণ, কেউ নেই। আমি তো ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রীকে অভিনন্দন জানাইনি। আমি পাকিস্তানের একজন প্রধানমন্ত্রীকে অভিনন্দন জানিয়েছি। সে যেই হোক না কেন, আমি তো অভিনন্দন জানাবই। শাহবাজ শরিফকে জানানো অভিনন্দন বার্তায় একটা প্রতিবাদও জানিয়েছি। আমার ও ইমরান ভাইয়ের মধ্যকার ব্যক্তিগত একটি প্রতিবাদ।’
আফ্রিদি বলেছেন, ছোটবেলা থেকেই ইমরানকে আদর্শ মানেন তিনি, তাঁর কারণেই ২০১৩ সালে প্রথমবারের মতো ভোট দিয়েছেন, ‘আমি তাঁর মতো হতে চেয়েছি। যখন রাজনীতিতে এলেন, আমি তাঁকে সমর্থন দিয়েছি। যখন শৌকত খানম (ক্যানসার হাসপাতাল) প্রতিষ্ঠা করলেন, আমি সমর্থন দিয়েছি।
উনি সরকারপ্রধান হওয়ার আগপর্যন্ত তাঁকে সমর্থন দিয়েছি। আমি, আমার পরিবার ও আমার সন্তানেরা, আসলে পুরো পাকিস্তানই ওনার ওপর অনেক ভরসা করেছিল। বহু শিক্ষিত মানুষ ইমরান ভাইয়ের কারণে অনুপ্রাণিত হয়ে ভোট দিতে গিয়েছিল।’
আফ্রিদির দাবি, ইমরান খান তাঁদের প্রত্যাশা পূরণ করতে পারেননি, ‘ইমরান ভাই যদি (দরুদ শরিফ) পড়েন, আমরাও প্রতিদিন নামাজে সেটা পড়ি। মূল ব্যাপারটা হলো, আল্লাহ যেমন দেন, তেমনি কেড়েও নেন। আল্লাহ ইমরান খানকে দিয়েছিলেন এবং তিনিই কেড়ে নিয়েছেন।
ইমরান ভাই অনেক ভুল করেছেন বলেই আল্লাহ কেড়ে নিয়েছেন। এবং তাঁর এসব ভুল স্বীকার করে নেওয়া উচিত। তিনি এই ভুল স্বীকার করে নিলে ভালো রাজনৈতিক দল গঠন করতে পারবেন এবং আরও ভালোভাবে ফিরতে পারবেন। আমি সব সময় ভেবেছি ইমরান দারুণ দূরদর্শী। একজন নেতার আসল ব্যাপার তাঁর দর্শন। কিন্তু সে দর্শন কাজে লাগাতে আপনার একটা দল দরকার এবং তাঁর সে দল নেই।’
পরিবার নিয়ে টিভিতে হাজির হয়েছিলেন আফ্রিদি অনুষ্ঠানে ইমরানের পার্লামেন্ট থেকে সরে যাওয়ার সিদ্ধান্তেরও সমালোচনা করেছেন আফ্রিদি। বলেছেন, তাঁর পার্লামেন্টে ফেরা উচিত। সারা বিশ্ব থেকে সবাই ইমরানকে যে সমর্থন দিয়েছে, সেটা কাজে লাগাতেও বলেছেন।
এরপরই আফ্রিদির সমালোচনায় মেতেছেন সবাই। অনেকেই বলেছেন, আফ্রিদির দাবি, ইমরান ভুল করেছেন বলে এখন বর্তমান প্রধানমন্ত্রীকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। সে ক্ষেত্রে আফ্রিদি যখন ক্যারিয়ারে শূন্য রানে আউট হতেন, তখন পাকিস্তানি সমর্থকেরা আফ্রিদিকে ফেলে এবি ডি ভিলিয়ার্সকে সমর্থন করলেই পারতেন।
কাশিফ মাহমুদ নামের এক টিভি সঞ্চালক টুইট করেছেন, ‘শহীদ আফ্রিদির ক্যারিয়ারে তাকান। ক্রিকেটের সর্বনাশ করে এখন রাজনৈতিক দার্শনিক বনে গেছেন। ইমরান খানের ভুল ধরছেন। আরে, আপনি ক্রিকেট খেলতেই জানতেন না, রাজনীতি তো বহু দূরের ব্যাপার।’
এমন আলোচনার মধ্যে কাল মধ্যরাতে আফ্রিদি আরেকটি ভিডিও বার্তা দিয়েছেন। ইউটিউবে বলেছেন, তিনি কখনো ইমরান খানের ব্যক্তিগত কারণ নিয়ে কথা বলেননি। কিন্তু রাজনৈতিক নেতা ইমরানের সমালোচনা করেছেন এবং এটা করার তাঁর অধিকার আছে, ‘সমালোচনাকে ঘৃণায় বদলাবেন না।
ভালো করে আগে শুনুন। অন্যের অভিমতকে শ্রদ্ধা করতে পারাটা শক্তিশালী সমাজের নিদর্শন। আমি যা বলেছি পাকিস্তানের নাগরিক হিসেবে বলেছি। আমার কোনো রাজনৈতিক উদ্দেশ্য ছিল না এবং যা ভালো মনে করি, সেটাই বলব আমি। আমাদের সে অধিকার আছে এবং সেটা মনে রাখা ভালো।’
তাঁর এই বার্তা রিটুইট করে সমর্থন জানিয়েছেন তাঁর জামাতা ও জাতীয় দলের ফাস্ট বোলার শাহিন শাহ আফ্রিদি। কামরান আকমলও আফ্রিদিকে নিয়ে ওভাবে কথা বলায় সঞ্চালক কাশিফ মাহমুদের সমালোচনা করেছেন।