ভারতীয় দলে সুযোগ না পেয়ে চর্চায় সরফরাজ় খান। নিয়মিত রঞ্জিতে রান করে চলেছেন মুম্বইয়ের ক্রিকেটার, তবুও ভারতীয় দলে জায়গা হয় না তাঁর। সেই নিয়েও তিনি নিজে যেমন ক্ষোভ জানিয়েছেন, তেমনই তাঁকে দলে না নেওয়ায় নির্বাচকদের এক হাত নিয়েছেন সুনীল গাওস্করও। সরফরাজ়ের কোচ তাঁর বাবা নওশাদ খান। তিনিই জানালেন সরফরাজ়ের ছোটবেলার কথা।
ছোটবেলায় বয়সভিত্তিক প্রতিযোগিতায় খেলার সময় মাঝেমাঝেই দেখা হত সরফরাজ় এবং সচিন-পুত্র অর্জুন তেন্ডুলকরের। বড় গাড়ি করে আসতেন অর্জুন। হাতে আইপ্যাড। ছোট সরফরাজ়ের মনে হত তাঁরও এ রকম চাই। কিন্তু নওশাদের পক্ষে তা কিনে দেওয়া যে সম্ভব নয় তা জানতেন সরফরাজ। এক দিন মনের দুঃখে সরফরাজ় বাবাকে বলেন, “বাবা, অর্জুন কী ভাগ্যবান! গাড়ি, আইপ্যাড, সব আছে ওর।” নওশাদ তাঁর ছেলেকে কী বলবেন বুঝতে পারছিলেন না। তাঁর পক্ষে ছেলেকে এত দামি জিনিস কিনে দেওয়া সম্ভব ছিল না।
সরফরাজ় বুঝতে পারেন যে বাবা কষ্ট পেয়েছে। সঙ্গে সঙ্গে জড়িয়ে ধরেন বাবাকে। বলেন, “আমি আরও ভাগ্যবান। আমার বাবা সব সময় আমার সঙ্গে থাকতে পারে। সচিন সারা বিশ্ব ঘুরে খেলে বেড়ান, তিনি তো ছেলেকে সময়ই দিতে পারেন না।” সরফরাজ়ের সঙ্গে এখনও সারা ভারত ঘুরে বেড়ান নওশাদ। ছেলের সব খেলা মাঠে বসে দেখেন তিনি। খেলার আগে, পরে বাবার থেকে উপদেশ নেন।গত দু’মরসুম ধরে ভাল ছন্দে রয়েছেন সরফরাজ়।
মুম্বইয়ের হয়ে সব থেকে বেশি রান এসেছে তাঁর ব্যাট থেকে। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে ২৫ বছরের ব্যাটারের গড় ৫৩। এই ক্ষেত্রে গোটা বিশ্বে তাঁর আগে রয়েছেন মাত্র এক জন, অস্ট্রেলিয়ার ডোনাল্ড ব্র্যাডম্যান। তবু এখনও জাতীয় দলে সুযোগ হয়নি সরফরাজ়ের। মুম্বইয়ের ব্যাটারের প্রতি জাতীয় নির্বাচকদের বঞ্চনায় ক্ষুব্ধ গাওস্করও। তিনি বলেন, “আপনারা যদি শুধু রোগা, ছিপছিপে চেহারার ছেলে খোঁজেন, তা হলে ফ্যাশন শো-তে চলে যান। কয়েক জন ভাল মডেল খুঁজে এনে তাদের হাতে ব্যাট-বল ধরিয়ে দিন। তাদের ক্রিকেটার হিসাবে গড়ে তুলুন।”
ভারত বনাম অস্ট্রেলিয়া সিরিজ়ে সুযোগ পাননি সরফরাজ়। এর আগে বাংলাদেশ সফরেও দলে রাখা হয়নি তাঁকে। মুম্বইয়ের হয়ে রঞ্জি খেলার মাঝে সংবাদমাধ্যমে সরফরাজ় বলেন, ‘‘গত রঞ্জির ফাইনালে শতরানের পরে নির্বাচকদের সঙ্গে দেখা করেছিলাম। ওঁরা বলেছিলেন, বাংলাদেশ সফরে সুযোগ পাব। তৈরি থাকতে বলেছিলেন। কিন্তু পাইনি।’’ নির্বাচক প্রধান চেতন শর্মার কথাও টেনে এনেছেন সরফরাজ়। বলেছেন, ‘‘কয়েক দিন আগেই চেতনস্যরের সঙ্গে দেখা হল। উনি বললেন, আমি খুব তাড়াতাড়ি সুযোগ পাব। নির্বাচকদের কথায় বার বার আশা জাগছে। কিন্তু বার বার হতাশ হচ্ছি। এ ভাবে আগে থেকে আশা জাগানো ঠিক নয়।’’