দুর্দান্ত খেললেন। ম্যাচ শেষ হয়েছে কয়েক ঘণ্টা হলো। এখনো তো অনুভূতিটা তাজা। কেমন লাগছে?
তাসকিন আহমেদ: খুবই ভালো লাগছে। তবে আমি ভালো লাগায় ভেসে যাচ্ছি না। এখন আমি আবার স্বাভাবিক। সিরিজ জিতেছি, ম্যান অব দ্য ম্যাচ হয়েছি, ৫ উইকেট পেয়েছি। সব ঠিক আছে। আমার স্বপ্নটাই এখন বিশ্বমানের বোলার হওয়া। একটা সময় স্বপ্ন ছিল শুধু বাংলাদেশ দলে থাকা। এখন স্বপ্ন অনেক বড়। এটা তারই একটা অংশ। আবার যেদিন মার খাব, সেদিনও স্বাভাবিক থাকতে হবে।
আপনার ক্যারিয়ারের শুরু আর এখনকার মানসিকতার মধ্যে পার্থক্য কী?
তাসকিন: একটা বড় পরিবর্তন হয়েছে বলতে পারেন। একটা সময় মনে হতো খেললেই ভালো খেলব। অত খাটতে হবে না। ভালো তো খেলছিই, চোটেও পড়ব না। কিন্তু খারাপ সময় অনেক কিছু শিখিয়েছে আমাকে। কোভিডের আগে প্রায় তিন বছর বাংলাদেশ দলে খেলিনি। তখনই আসলে বুঝতে পারি বাংলাদেশ দলে খেলার মর্মটা কী।
একটা সময় তো মনে হতো, আমি ভালো খেলছি, উইকেট পাচ্ছি, আমি অটোমেটিক চয়েজ। তখন নাম, খ্যাতি, অর্থ আসছিল। মনে হতো, এসব তো হবেই। কিন্তু এরপর আমি চোটে পড়লাম, দলের বাইরে চলে গেলাম, পরে দেখলাম আমি কোনোভাবেই আর দলে ঢুকতে পারছি না। তখন বুঝতে পারি এই জায়গার মূল্য কী।
কোভিডের সময় আপনি ফিটনেস নিয়ে অনেক কাজ করেছেন, বোলিংয়েও উন্নতি এনেছেন। কিন্তু মানসিকতায় পরিবর্তন আনলেন কীভাবে?
তাসকিন: আমি যখন অনেক দিন ধরে দলের বাইরে, সবাই বলছিল আমি শেষ। একটা পর্যায়ে পরিবারের সদস্যরা সব সময় আমার মন খারাপ দেখত। আমি কিছু করতাম না। তখন সবাই আশা ছেড়ে দিয়েছিল। সবাই সান্ত্বনা দিত, ‘তুমি তো খেলেছ জাতীয় দলের হয়ে…।’ কিন্তু মনে মনে চেয়েছিলাম আমি ফিরব।
কোভিড কমে আসার পর আমি ওমরাহ করতে গেলাম। আমি তখন আল্লাহর ঘরেই চেয়ে এসেছিলাম, আমি আবার জাতীয় দলে খেলব। নিজের কাছে নিজে প্রতিজ্ঞা করি যে আমি খেলতে চাই।
এরপর ফিটনেস ট্রেনিং শুরু করি। কিন্তু দুই মাস ট্রেনিং করার পর দেখলাম ভেতরের নেতিবাচক মানসিকতাটা যাচ্ছে না। হতাশা কাটছে না। তখন মনোবিদের সাহায্য নিলাম। এরপর সব ঠিক হয়ে এল, কিন্তু বোলিং অনুশীলনের জায়গা নেই, কারফিউ (বিধিনিষেধ)।
তখন গ্যারেজে স্কিল নিয়ে কাজ শুরু করলাম এবং ভিডিও করে সুজন স্যারকে (খালেদ মাহমুদ) পাঠাতাম। সুজন স্যারকে পাঠানোর মূল কারণ, ছোটবেলায় উনি যখন আমাকে পেয়েছেন, তখন আমি শূন্য থেকে শুরু করেছিলাম।
এ ছাড়া ফিটনেস ট্রেনিংয়ের জন্য দেবুদা এবং মাইন্ড ট্রেনিংয়ের জন্য সাবিত ভাই—এই তিনজন আমাকে অনেক সাহায্য করেছেন। আমার লক্ষ্য ছিল মানুষ আমাকে ‘শেষ’ ধরে নিলেও আমি নিজের জন্য হলেও আরেকবার বাংলাদেশ দলে খেলব। আল্লাহ আমার সে ইচ্ছা পূরণ করেছেন।